ছেলেপেলের আর দোষ কি?-বাবা-মা’ই যদি হয় এরকম।
সেদিন এক বড় ভাইয়ের বাসায় গেলাম।ভাই, ভাবী আর তাদের এক ছেলে নিয়ে তাদের সংসার।ছেলেটার বয়স সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় বছরের মত হবে।তো বাসায় গিয়ে দেখলাম বাসার টি.ভি.তে হিন্দী গান বাজছে।ভাই অবশ্য একটার পর একটা চ্যানেল চেঞ্জ করছেন কিন্তু একটা বাংলা বা স্পোর্টস চ্যানেলও ধরছেননা।
হিন্দী চ্যানেল তাও আবার যেখানে স্বল্পবসনারা উদ্দাম লয়ে নৃ্ত্যরত এবং তার সাথে উদ্দাম ছন্দের গান বাজছে, ধরা হচ্ছে কেবল সেই চ্যানেল গুলোই।আর সেই গানের তালে তালে বাবা আর পুত্র দুজনেই একসাথে হাতে তুড়ি বাজিয়ে বাজিয়ে দুলছেন আর আস্তে আস্তে টি.ভি.র সাথে গান গাচ্ছেন।
অনেক্ষন পর থাকতে না পেরে বললাম, “ভাই স্বাধীনতার মাসেও ছেলেকে হিন্দী শেখাচ্ছেন?বাংলা চ্যানেল ধরেননা!এভাবে থাকলে তো ছেলে বাংলা বলা ভুলেই যাবে।”
তো তখন ভাইয়ের উত্তর হচ্ছে,”ও(মানে ছেলে) তো এখন হিন্দীই বেশি বলে।দরজায় নক করলে ভিতর থেকে বলে ওঠে কৌন হ্যায়?আর বাংলা চ্যানেল মানুষ দ্যাখে?ওগুলোতে কোন অনুষ্ঠান আছে না কি আছে?”
খেয়াল করলাম, ছেলের হিন্দী পারদর্শিতা নিয়ে যখন ভাই কথা বলছিল তখন তার কন্ঠে ছিল একটা গর্বের ভাব, আর যখন বাংলা চ্যানেল নিয়ে কথা বলছিলেন তখন ছিল ক্ষোভ এবং তাচ্ছিল্য।
আসলে দোষ দেশীয় চ্যানেলগুলোর, নাকি গুন বিজাতীয় চ্যানেলগুলোর তা বুঝতে না পারলেও একটা জিনিস বুঝতে পারলাম যে ওই শিশুটির মনে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি যে আকর্ষন গড়ে উঠছে তা খুবই আশঙ্কাজনক।
এখন আপনারাই বলেন, বর্তমান সময়ে ছেলে পেলের মধ্যে যে নৈ্তিকতা এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে, সাথে সাথে নিজ সংস্কৃতিকে দূর দূর বলে তাড়িয়ে দিয়ে বিদেশী সংস্কৃতি বানরের মত অনুকরন করে যাচ্ছে তাতে বাবা মায়ের অবদান কি কম?ছোট বেলা থেকেই যদি ছেলেকে শেখানো হয় হিন্দী(আর ছেলে বাংলা না বলে হিন্দী বললে সেটা বাবার জন্যে যদি হয় গর্বের কারন), দেখানো হয় উদ্দাম-অশ্লীল নাচ-গান, তাহলে সেই ছেলের মধ্যে নৈ্তিকতা, মূল্যবোধ এবং স্ব-সংস্কৃতির প্রতি মমত্ববোধ কম থাকবে এটাই কি স্বাভাবিক না?মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পরিবারে যদি শেখানো হয় এসব তাহলে সেই ছেলে বড় হয়ে যখন ফরেনার সাজতে চাইবে তখন তাকে দোষ দেই ই বা কিভাবে?
শেষে আপনারা যারা বাবা বা মা হয়েছেন বা হতে যাচ্ছেন,তাদের কাছে একটাই অনুরোধ ছেলে-মেয়েকে নিজ সংস্কৃতি, নিজ দেশ, নিজ ভাষা ভালোবাসতে শেখান প্লিজ।এদেশের সংস্কৃতি সব কিছু থাকার পরেও বিশ্বমানে পৌঁছাতে পারেনা শুধু ধারকের অভাব বা ধারকের দূর্বলতার কারনে।সুতরাং আজকের শিশু যারা আগামীর ভবিষ্যৎ তারা যদি শেখার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান পরিবার থেকে বঞ্চিত হয় নিজস্বতাকে ভালোবাসতে শিখতে, তাহলে শুধু তাদেরকে দোষ দিয়ে কোন লাভ হবেনা।
© জয় সরকার।
Posted on ডিসেম্বর 26, 2010, in সাদা চোখে. Bookmark the permalink. 6 টি মন্তব্য.
জয়ভাই,
আসলে এটাই আমাদের সমস্যা। দেশের প্রতি ভালবাসা দিনদিন কমছে মানুশের। আর আমরা ও কিন্তু কম যাই না।
কিন্তু আমাদেরকেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। বেশি কিছু তো দরকার না, সামান্য একটু সচেতনতাই অনেক কিছু বদলে দিতে পারে।
অনেক ধন্যবাদ।
জয় আপনার কথাই ঠিক। এমন অনেক বাবা মা’ই আছেন যারা ছেলেমেয়েদের হিন্দী চ্যানেল দেখা বা হিন্দী কথা বলা নিয়ে অনেক গর্ববোধ করেন। বাবা মায়েরাই যদি এমন হন তাহলে সন্তানদের কাছ থেকে আর কি আশা করা যায়!!!
আমারও সেই একই কথা।
তোমার লেখা দেখে ভালো লাগল। চালিয়ে যাও।
থ্যাঙ্কস দোস্ত।